১ শতাংশ জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে ২০২৫

জমি কিনেছেন কিন্তু খারিজ বা নামজারি করতে কত টাকা লাগবে সেটা নিয়ে চিন্তিত? আজকের এই পোস্টে আমি আপনাকে এক শতাংশ জমি খারিজ করতে ঠিক কত টাকা খরচ হয় এবং কীভাবে ন্যূনতম খরচে এই কাজটি সম্পন্ন করবেন তা বিস্তারিত জানাব।

যেকোনো পরিমাণ জমি (১ শতাংশ বা ১০০ শতাংশ) খারিজ করতে মোট ১,১৭০ টাকা লাগে। এটি বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত অফিসিয়াল ফি।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: জমির পরিমাণ যাই হোক না কেন (১ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ বা ১০০ শতাংশ), একটি দলিলের জন্য খরচ একই – ১,১৭০ টাকা। কারণ ফি জমির পরিমাণ অনুযায়ী নয়, বরং দলিল অনুযায়ী হিসাব করা হয়।

পোষ্টের বিষয়বস্তু

১ শতাংশ জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে

ফি’র ধরনটাকার পরিমাণবিবরণ
কোর্ট ফি২০ টাকাআবেদনপত্র দাখিলের সময়
নোটিশ জারি ফি৫০ টাকাসংশ্লিষ্ট পক্ষকে জানানোর জন্য
রেকর্ড সংশোধন ফি১,০০০ টাকাখতিয়ান হালনাগাদ করার জন্য
খতিয়ান কপি সরবরাহ১০০ টাকানতুন খতিয়ান প্রদানের জন্য
সর্বমোট১,১৭০ টাকাচূড়ান্ত খরচ

অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি

প্রথম ধাপ: আবেদনের সময় – ৭০ টাকা (কোর্ট ফি ২০ + নোটিশ ফি ৫০)

  • বিকাশ, নগদ, রকেট অথবা ব্যাংক ট্রান্সফার দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন

দ্বিতীয় ধাপ: আবেদন অনুমোদনের পর – ১,১০০ টাকা

  • খতিয়ান ডাউনলোডের আগে এই পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে

এক শতাংশ জমি মানে আসলে কতটুকু?

বাংলাদেশে জমির মাপজোক বুঝতে এই তথ্যগুলো জানা জরুরি:

১ শতাংশ = কত?

  • ৪৩৫.৬০ বর্গফুট (প্রায়)
  • ৪৮.৪০ বর্গগজ (প্রায়)
  • ৪০.৪৭ বর্গমিটার (আনুমানিক)

দ্রুত রূপান্তর

  • ১০০ শতাংশ = ১ একর
  • ১ শতাংশ = ০.০১ একর
  • ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ (প্রায়)

মনে রাখবেন: দলিলে যত শতাংশ জমিই থাকুক, খারিজ ফি একই ১,১৭০ টাকা থাকবে।

কেন অনেকে বেশি টাকা দাবি করে?

বাস্তবতা হলো, অনেক এলাকায় ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ করা হয়। এর কারণগুলো:

১. সেবা সহায়তার নামে অতিরিক্ত চার্জ

  • অনলাইন আবেদন করার সহায়তা
  • কাগজপত্র সংগ্রহে সাহায্য
  • ফরম পূরণ সেবা

২. দুর্নীতি ও অনিয়ম

দুঃখজনক হলেও সত্য যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা সরকারি ফির বেশি দাবি করেন।

️ আপনার করণীয়

সরকারি ফি ১,১৭০ টাকার বেশি ১ টাকাও দেবেন না

✅ বেশি টাকা চাইলে জেলা প্রশাসক বা ভূমি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করুন

✅ সব পেমেন্টের রসিদ সংরক্ষণ করুন

✅ অনলাইনে নিজে আবেদন করুন (সম্পূর্ণ বিনামূল্যে)

অনলাইনে খারিজ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া

ধাপ ১: ওয়েবসাইটে যান

mutation.land.gov.bd – এই সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

ধাপ ২: নতুন আবেদন

  • “নতুন আবেদন” বাটনে ক্লিক করুন
  • বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা নির্বাচন করুন
  • জমির তথ্য প্রদান করুন

ধাপ ৩: ডকুমেন্ট আপলোড

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করুন (প্রতিটি ফাইল সর্বোচ্চ ২ MB)

ধাপ ৪: পেমেন্ট

প্রথমে ৭০ টাকা পেমেন্ট করুন মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে

ধাপ ৫: আবেদন ট্র্যাকিং

আবেদন আইডি সংরক্ষণ করুন এবং নিয়মিত স্ট্যাটাস চেক করুন

ধাপ ৬: চূড়ান্ত পেমেন্ট

আবেদন অনুমোদিত হলে বাকি ১,১০০ টাকা পেমেন্ট করুন

ধাপ ৭: খতিয়ান ডাউনলোড

পেমেন্ট সম্পন্ন হলে নতুন খতিয়ান ডাউনলোড করুন

⏱️ সময়সীমা: সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা (আইন অনুযায়ী)

খারিজের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

✔️ সকলের জন্য বাধ্যতামূলক

  1. দলিলের সত্যায়িত কপি (বায়া দলিল/হেবা দলিল/বন্টননামা)
  2. সর্বশেষ খতিয়ানের কপি (সিএস/এসএ/আরএস/বিএস)
  3. জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (আবেদনকারী এবং সকল মালিকের)
  4. পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩ মাসের মধ্যে তোলা)
  5. হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ
  6. পূর্ববর্তী মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)

বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন

  • ওয়ারিশ সনদপত্র: উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির জন্য (৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত)
  • মৃত্যু সনদ: পূর্ববর্তী মালিক মারা গেলে
  • আদালতের রায়/আদেশ: যদি কোনো মামলা থাকে
  • উপহার দলিল: হেবা সূত্রে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে

⚖️ খারিজ করা কেন অপরিহার্য?

অনেকে মনে করেন দলিল করলেই যথেষ্ট, খারিজের দরকার নেই। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

মালিকানা সুরক্ষা

  • সরকারি রেকর্ডে আপনার নাম অন্তর্ভুক্ত হবে
  • একই জমি একাধিকবার বিক্রয়ের ঝুঁকি থাকবে না
  • ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমার সম্ভাবনা কমে যাবে

আর্থিক সুবিধা

  • ব্যাংক লোনের জন্য খতিয়ান অপরিহার্য
  • জমি বন্ধক রাখতে হালনাগাদ খতিয়ান লাগে
  • সরকারি সহায়তা পেতে খতিয়ান প্রয়োজন

‍‍‍ উত্তরাধিকার সুরক্ষা

  • আপনার মৃত্যুর পর সন্তানরা সহজে উত্তরাধিকার পাবে
  • পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাদ এড়ানো যাবে
  • নারী সদস্যদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে

খরচ সাশ্রয়ের কার্যকর উপায়

১. নিজেই অনলাইনে করুন

  • কম্পিউটার বা স্মার্টফোন দিয়ে নিজে আবেদন করতে পারবেন
  • কোনো অতিরিক্ত সেবা চার্জ লাগবে না
  • মাত্র ১,১৭০ টাকা খরচ হবে

২. ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সাহায়তা

  • যদি নিজে না পারেন, স্থানীয় UDC তে যান
  • তারা ২০০-৫০০ টাকায় সাহায্য করবে
  • তবুও সরকারি ফি থাকবে ১,১৭০ টাকাই

৩. একসাথে একাধিক দলিল খারিজ

  • যদি একাধিক দলিল থাকে, একসাথে আবেদন করুন
  • প্রতিটি দলিলের জন্য ১,১৭০ টাকা করে লাগবে

⚠️ সতর্কতা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

✅ অবশ্যই করণীয়

  • প্রতিটি পেমেন্টের রসিদ সংরক্ষণ করুন
  • আবেদন আইডি নম্বর সুরক্ষিত রাখুন
  • নিয়মিত আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করুন
  • ৩ মাসের মধ্যে খতিয়ান ডাউনলোড করে রাখুন
  • সরকারি ওয়েবসাইট mutation.land.gov.bd ব্যবহার করুন

❌ যা একেবারেই করবেন না

  • সরকারি ফির চেয়ে বেশি টাকা দেবেন না
  • দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর পেছনে ছুটবেন না
  • ভুয়া ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করবেন না
  • অসম্পূর্ণ কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করবেন না
  • নকল বা ভুল তথ্য প্রদান করবেন না

FAQs

১. জমির পরিমাণ বেশি হলে কি বেশি টাকা লাগে?

না। ১ শতাংশ হোক বা ১০০ শতাংশ, একটি দলিলের জন্য খরচ একই – ১,১৭০ টাকা।

২. খারিজ হতে কত দিন সময় লাগে?

সঠিক কাগজপত্র থাকলে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে বাস্তবে ২-৩ মাস লাগতে পারে।

৩. একসাথে কয়টি দলিল খারিজ করা যায়?

প্রতিটি দলিলের জন্য আলাদা আবেদন করতে হয়। তবে একই সময়ে একাধিক আবেদন জমা দেওয়া যায়।

৪. খতিয়ান কি অনলাইনে পাওয়া যায়?

হ্যাঁ। পেমেন্ট সম্পন্ন হলে mutation.land.gov.bd থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে ৩ মাসের মধ্যে ডাউনলোড করতে হবে।

৫. খারিজ না করলে কি সমস্যা হবে?

হ্যাঁ। সরকারি রেকর্ডে আপনার নাম থাকবে না, ব্যাংক লোন পাবেন না, এবং ভবিষ্যতে মালিকানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

৬. অনলাইনে আবেদনের স্ট্যাটাস কীভাবে চেক করব?

mutation.land.gov.bd/search-application এই লিংকে গিয়ে আবেদন আইডি বা NID নম্বর দিয়ে চেক করতে পারবেন।

৭. পুরাতন জমির খারিজ করা যায়?

হ্যাঁ। যতই পুরাতন দলিল হোক, সঠিক কাগজপত্র থাকলে খারিজ করা যায়।

৮. শহর এবং গ্রামের জন্য ফি কি আলাদা?

না। সারাদেশে একই ফি – ১,১৭০ টাকা।

উপসংহার

এক শতাংশ বা যেকোনো পরিমাণ জমি খারিজ করতে সরকারি নির্ধারিত খরচ মাত্র ১,১৭০ টাকা। এর বেশি কোনো টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অনলাইনে আবেদন করলে আরও সুবিধা পাবেন এবং দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।

মনে রাখবেন:

  • ✅ জমির দলিল করা ≠ মালিকানা সম্পূর্ণ
  • ✅ খারিজ না করলে মালিকানা সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়
  • ✅ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঠিক প্রক্রিয়ায় খারিজ করুন

এখনই শুরু করুন:

  • অনলাইন আবেদন করুন – mutation.land.gov.bd
  • স্ট্যাটাস চেক করুন আপনার আবেদনের
  • সমস্যা হলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যোগাযোগ করুন

শেয়ার করুন: এই তথ্য অন্যদের কাজে লাগতে পারে। আপনার বন্ধু-পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top