জমির মালিকদের জন্য ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করা একটি বার্ষিক আবশ্যকীয় বিষয়। এই করের হার এবং নিয়মকানুন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। অ্যাডভোকেট কাজী হুমায়ুন কবিরের তথ্য এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জমির ব্যবহার ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে খাজনার পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা কী?
ভূমি উন্নয়ন কর, যা খাজনা নামে বেশি পরিচিত, হলো জমির মালিকানার বিপরীতে সরকারকে বার্ষিক প্রদেয় একটি কর। এই কর পরিশোধের পর সরকার একটি রশিদ প্রদান করে, যা ‘দাখিলা’ নামে পরিচিত। এই দাখিলা জমির মালিকানা প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে।
জমির শ্রেণীবিভাগ ও খাজনার হার
সরকার ভূমিকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করে কর আরোপ করে: কৃষি, আবাসিক এবং বাণিজ্যিক।
১. কৃষি জমি:
কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য ৮.২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির কোনো উন্নয়ন কর বা খাজনা দিতে হয় না। তবে, এই নিয়মের কিছু শর্ত রয়েছে:
- কর মওকুফ: ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিককে কোনো কর দিতে না হলেও, প্রতি হোল্ডিংয়ের জন্য ১০ টাকার একটি মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক।
- করযোগ্য কৃষি জমি: যদি কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হয়, তবে সম্পূর্ণ জমির জন্য প্রতি শতাংশ ২ টাকা হারে বার্ষিক খাজনা প্রযোজ্য হবে।
- বিশেষায়িত কৃষি জমি: চা, কফি, রাবার, ফুল বা ফলের বাগান এবং বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ, বা পশুপালনের খামারের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ যাই হোক না কেন, প্রতি শতাংশের জন্য ২ টাকা হারে খাজনা দিতে হবে।
২. আবাসিক জমি:
আবাসিক জমির খাজনার হার এলাকার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।
- পৌরসভার বাইরের এলাকা (ইউনিয়ন পর্যায়): পাকা ভিটির বাড়ির জন্য প্রতি শতাংশ জমির খাজনা ১০ টাকা।
- উপজেলা পর্যায়: প্রতি শতাংশ জমির খাজনা ১৫ টাকা।
- জেলা পর্যায়: প্রতি শতাংশ জমির খাজনা ২০ টাকা।
৩. বাণিজ্যিক জমি:
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত জমির ক্ষেত্রে খাজনার হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
- পৌরসভার বাইরের এলাকা (ইউনিয়ন পর্যায়): প্রতি শতাংশ জমির খাজনা ৪০ টাকা।
- উপজেলা পর্যায়: প্রতি শতাংশ জমির খাজনা ৬০ টাকা।
- জেলা পর্যায়: প্রতি শতাংশ জমির খাজনা ১০০ টাকা।
আরও দেখুন: জমির পরিমাপ শতাংশ হিসাব বের করার সূত্র
খাজনা পরিশোধের নিয়মাবলী ও নতুন আইন
- পরিশোধের সময়কাল: ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলা সনের পরিবর্তে ইংরেজি অর্থবছর (১লা জুলাই থেকে ৩০শে জুন) অনুযায়ী কর আদায় করা হবে।
- অনলাইন পেমেন্ট: বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (ldtax.gov.bd) অথবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে অনলাইনে সহজেই খাজনা পরিশোধ এবং দাখিলা সংগ্রহ করা যায়। এমনকি প্রবাসীরাও এই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে নিজেদের জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
- বকেয়া খাজনার জরিমানা: কোনো কারণে টানা তিন বছর খাজনা পরিশোধ না করা হলে, বকেয়া করের ওপর বার্ষিক ৬.২৫% হারে জরিমানা আরোপিত হয়। তিন বছর পর সরকার সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে বকেয়া আদায় করতে পারে, যার ফলে জমি নিলামেও উঠতে পারে।
নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে জমির মালিকানা সুরক্ষিত রাখা এবং আইনি জটিলতা এড়ানো প্রত্যেক ভূমি মালিকের দায়িত্ব।