বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান বের করার নিয়ম
আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:
- এস এ (State Acquisition) খতিয়ান
- আর এস (Revisional Survey) খতিয়ান
- বি আর এস (Bangladesh Revisional Survey) অথবা সি এস (Cadastral Survey) খতিয়ান
- পি এস খতিয়ান
প্রত্যেকটি খতিয়ানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এগুলো বের করার নিয়মও ভিন্ন। চলুন, ধাপে ধাপে এই নিয়মগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. এস এ খতিয়ান বের করার নিয়ম
এস এ খতিয়ান হলো পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে তৈরি করা প্রথম খতিয়ান। এটি রেকর্ড অফ রাইটস নামেও পরিচিত।
এস এ খতিয়ান বের করার জন্য যা প্রয়োজন:
- মৌজা ও জে এল (Jurisdiction List) নম্বর
- খতিয়ান নম্বর অথবা দাগ নম্বর
- জমির মালিকের নাম
এস এ খতিয়ান বের করার নিয়ম:
- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- এস এ খতিয়ানের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন মৌজা নম্বর, জে এল নম্বর, খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর এবং মালিকের নাম উল্লেখ করুন।
- ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিন।
- কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন যাচাই করে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করবে।
২. আর এস খতিয়ান বের করার নিয়ম
আর এস খতিয়ান এস এ খতিয়ানের পরে তৈরি করা হয়। এটি আগের খতিয়ানের ভুলত্রুটি সংশোধন করে নতুনভাবে তৈরি করা হয়।
আর এস খতিয়ান বের করার জন্য যা প্রয়োজন:
- মৌজা ও জে এল নম্বর
- খতিয়ান নম্বর অথবা দাগ নম্বর
- জমির মালিকের নাম
আর এস খতিয়ান বের করার নিয়ম:
- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- আর এস খতিয়ানের জন্য আবেদন করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন মৌজা নম্বর, জে এল নম্বর, খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর এবং মালিকের নাম উল্লেখ করুন।
- ফি জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করুন।
- কিছুদিনের মধ্যে আপনি আর এস খতিয়ানের একটি সার্টিফাইড কপি পাবেন।
৩. বি আর এস খতিয়ান বের করার নিয়ম
বি আর এস খতিয়ান হলো সবচেয়ে আধুনিক খতিয়ান। এটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, তাই এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটিকে সি এস খতিয়ানও বলা হয়।
বি আর এস খতিয়ান বের করার জন্য যা প্রয়োজন:
- মৌজা ও জে এল নম্বর
- খতিয়ান নম্বর অথবা দাগ নম্বর
- জমির মালিকের নাম
বি আর এস খতিয়ান বের করার নিয়ম:
- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান অথবা অনলাইনে আবেদন করুন।
- বি আর এস খতিয়ানের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন মৌজা নম্বর, জে এল নম্বর, খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর এবং মালিকের নাম উল্লেখ করুন।
- ফি জমা দিন।
- অনলাইনে আবেদন করলে, আপনার ইমেইলে খতিয়ানের কপি পাঠানো হবে অথবা আপনি ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
৪. পর্চা বের করার নিয়ম
পর্চা হলো খতিয়ানের একটি অনুলিপি বা সার্টিফাইড কপি। এটি জমির মালিকানার প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পর্চা বের করার নিয়ম:- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- পর্চা পাওয়ার জন্য আবেদন করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, মৌজা নম্বর ইত্যাদি উল্লেখ করুন।
- ফি জমা দিন এবং রশিদ সংগ্রহ করুন।
- কিছুদিনের মধ্যে আপনি পর্চার একটি সার্টিফাইড কপি পাবেন।
৫. খতিয়ান নম্বর বের করার নিয়ম
যদি আপনার কাছে খতিয়ান নম্বর না থাকে, তবে আপনি নিম্নলিখিত উপায়ে এটি জানতে পারেন:
- আপনার জমির পুরনো দলিলপত্র দেখুন। সেখানে খতিয়ান নম্বর উল্লেখ থাকতে পারে।
- স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে জমির মালিকের নাম ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান করুন।
- জমির আশপাশের মালিকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
৬. দাগ নম্বর দিয়ে খতিয়ান বের করার নিয়ম
জমির দাগ নম্বর ব্যবহার করে খতিয়ান বের করা বেশ সহজ। দাগ নম্বর হলো একটি নির্দিষ্ট জমির পরিচিতি নম্বর, যা ম্যাপে উল্লেখ থাকে।
দাগ নম্বর দিয়ে খতিয়ান বের করার নিয়ম:- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করে খতিয়ানের জন্য আবেদন করুন।
- প্রয়োজনীয় ফি জমা দিন।
- ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা দাগ নম্বর দিয়ে আপনার জমির খতিয়ান খুঁজে বের করে সরবরাহ করবেন।
৭. অনলাইন থেকে খতিয়ান বের করার নিয়ম
বর্তমানে, অনেক জেলায় অনলাইনে খতিয়ান বের করার সুবিধা রয়েছে। এটি একটি সহজ এবং দ্রুত প্রক্রিয়া।
অনলাইনে খতিয়ান বের করার নিয়ম:- প্রথমে, আপনার জেলার ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে যান।
- “ই-পর্চা” অথবা “অনলাইন খতিয়ান” অপশনটি খুঁজুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন জেলা, উপজেলা, মৌজা, খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর ইত্যাদি নির্বাচন করুন।
- আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা লিখুন।
- নির্ধারিত ফি অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করুন।
- আবেদন সম্পন্ন হলে, আপনি খতিয়ানের একটি ডিজিটাল কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, অনলাইন থেকে পাওয়া খতিয়ানের কপি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য ব্যবহার করা যায়। আইনি প্রয়োজনে সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে।
৮. খতিয়ান বের করার লিংক
অনলাইনে খতিয়ান বের করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিংক নিচে দেওয়া হলো:খতিয়ান বের করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
খতিয়ান বের করার সময় কিছু কাগজপত্র দরকার হতে পারে। এগুলো হলো:
- জমির মালিকানার দলিল (যেমন ক্রয় দলিল, দানপত্র, হেবা দলিল)
- পরিচয়পত্র (যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ)
- ওয়ারিশ সনদ (যদি মালিক মৃত হন)
- জমির খাজনা পরিশোধের রশিদ
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
খতিয়ান বের করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
খতিয়ান বের করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:- আবেদনপত্র সম্পূর্ণ এবং সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় নথি সাথে রাখুন।
- স্থানীয় ভূমি অফিসের সময়সূচি সম্পর্কে জেনে নিন।
খতিয়ান বের করা নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
আমি কিভাবে আমার জমির খতিয়ান পাব?
আপনি আপনার এলাকার ভূমি অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনে আবেদন করে আপনার জমির খতিয়ান পেতে পারেন।
খতিয়ান পেতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
জমির মালিকানার দলিল, পরিচয়পত্র, ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), খাজনা পরিশোধের রশিদ এবং আবেদনকারীর ছবি লাগে।
অনলাইনে খতিয়ান পাওয়ার নিয়ম কি?
আপনার জেলার ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করে অনলাইনে খতিয়ান পাওয়া যায়।
পর্চা কি?
পর্চা হলো খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি, যা জমির মালিকানার প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
দাগ নম্বর দিয়ে খতিয়ান বের করার নিয়ম কি?
ভূমি অফিসে গিয়ে দাগ নম্বর উল্লেখ করে খতিয়ানের জন্য আবেদন করলে, কর্মকর্তারা দাগ নম্বর দিয়ে আপনার জমির খতিয়ান খুঁজে বের করে দেবেন।
বি আর এস খতিয়ান কি?
বি আর এস খতিয়ান হলো বাংলাদেশ রিভিশনাল সার্ভে খতিয়ান, যা সবচেয়ে আধুনিক এবং কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।
এস এ খতিয়ান কি?
এস এ খতিয়ান হলো স্টেট অ্যাকুইজিশন খতিয়ান, যা পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে তৈরি করা হয়েছিল।
খতিয়ানে ভুল থাকলে কি করব?
খতিয়ানে ভুল থাকলে দ্রুত ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করুন।


